আপনার ১ ঘন্টার দাম কত?
ধরে নেন আপনি একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। আপনি ইউটিউবে ভিডিও বানান। আপনি একটা ভিডিও ক্যামেরাতে রেকর্ড করেছেন। এখন রেকর্ড করলেই তো খালি হবে না, সেটা এডিটিং এর ব্যাপার আছে। আপনি নিজে এডিটিং পারেন। সো আপনি চাইলে নিজেই ভিডিওটা এডিটিং করতে পারেন। অথবা চাইলে কাউকে দিয়ে করাইতেও পারেন।
আপনি কোনটা করবেন?
বেশিরভাগ মানুষ বলবে আমার যদি এডিটিং করতে ভাল্লাগে করবো। আর যারা একটু অলস আমার মতো তারা বলবে আরেকজনকে দিয়ে দিবো, আমার এতো তেল নাই। (সত্যি বলতে এডিটিং খুব প্যারাদায়ক একটা কাজ)
কিন্তু যারা প্রচন্ড এফেক্টিভ এবং এফিসিয়েন্ট মানুষ, তারা কিন্তু এভাবে ভাববে না। তারা এখানে খুব সহজ একটা হিসাব করবে।
যারা হাইলি এফেক্টিভ মানুষ, তারা জানেন তাদের সময়ের দাম কত। আরো স্পেসিফিক্যালি বললে, তাদের ১ ঘন্টা সময়ের দাম কত। ধরে নিলাম মিস্টার এক্স একজন এফেক্টিভ মানুষ। তার ১ ঘন্টা সময়ের দাম ১০০০ টাকা। তার মানে, এক্স সাহেব ১ ঘন্টা কাজ করলে সেই কাজের জন্য ১০০০ টাকা পান।
আবার ধরেন, ভিডিও এডিটিং করতে ১ ঘন্টা সময় লাগবে। মিস্টার এক্স যদি কাউকে দিয়ে করান তাহলে তাকে ৫০০ টাকা দিতে হবে।
এখন ব্যাপারটা হিসাব করে দেখেন, এক্স সাহেব দেখবে, সে যদি নিজে এডিটিং করে, তাহলে তার আসলে ৫০০ টাকা ক্ষতি হবে। কারণ সে জানে ১ ঘন্টা তার আসল কাজে ব্যয় করলে সে ১০০০ টাকা পাইতো। কিন্তু নিজে এডিটিং করায় সে শুধু ৫০০ টাকা বাঁচাতে পারতেসে।
১ ঘন্টা কাজ করলে যেখানে আপনি ১০০০ টাকা পেতেন, সেখানে ১ ঘন্টা ব্যয় করে ভিডিও এডিটিং করে ৫০০ টাকা বাঁচানোর কোনো মানে হয় না, তাইনা?
এই সহজ হিসাব করেই এক্স সাহেব সিদ্ধান্ত নিবেন যে তিনি এডিটিং এর কাজটা আরেকজনকে দিয়ে দিবেন।
আবার যদি এক্স সাহেবের ১ ঘন্টা সময়ের দাম ২০০ টাকা হতো, তাইলে কিন্তু এডিটিং এর কাজটা নিজে করাই বুদ্ধিমানের হবে।
এখন ব্যাপারটা বুঝতেসেন, কেন নিজের ১ ঘন্টা সময়ের দাম জানাটা কেন জরুরি?
চলেন এবার বের করে ফেলি আপনার ১ ঘন্টা সময়ের দাম কত!
স্টেপ ১ঃ আপনার সময় ট্র্যাক করা
আপনি প্রতিদিন কত ঘন্টা আপনার কাজের পেছনে ব্যয় করেন? সমস্ত সময়টা ট্র্যাক করে ফেলেন। ধরেন আপনি ৯-৫ টা কাজ করেন। তাইলে ৮ ঘন্টা হয়। আরো ধরে নিচ্ছি অফিসে যেতে এবং আসতে আপনার ২ ঘন্টা খরচ হয়।
তাহলে প্রতিদিন কাজের পেছনে আপনি ১০ ঘন্টা ব্যয় করেন।
তাহলে সপ্তাহে হয় ৫০ ঘন্টা (২ দিন সাপ্তাহিক বন্ধ ধরলে)। বছরে হয় ২৫০০ ঘন্টা (২ সপ্তাহ আপনি ছুটি কাটান ধরে নিলাম)।
তাহলে এক বছরে আপনি ২৫০০ ঘন্টা ব্যয় করেন কাজের পেছনে।
এখন আপনার হিসাব অবশ্যই এটার থেকে আলাদা হবে। আর আপনি যদি বিজনেস করেন বা অফিসের পাশাপাশি কোনো সাইড ব্যবসা থাকে, তাহলে সেটার সময়ও যোগ করে নিবেন।
স্টেপ ২ঃ বছরে টোটাল ইনকাম
এটা সহজ। আপনি প্রতি মাসে কত টাকা ইনকাম করেন সেটা ১২ দিয়ে গুণ দিয়ে দেন। যদি আপনার এক্সট্রা কোনো ইনকাম থাকে সেটাও যোগ করে দেন।
ধরে নিলাম, আপনি আপনার চাকরি থেকে মাসে ১ লাখ টাকা পান। তাহলে বছরে হয় ১২ লাখ টাকা। আর এটাও ধরে নিলাম, আপনার একটা সাইড ব্যবসা আছে। সেখান থেকে বছরে ৩ লাখ টাকা আসে। তাহলে আপনি টোটাল বছরে ১৫ লাখ টাকা ইনকাম করেন।
এভাবে খুব সহজে আপনার বছরে ইনকাম কত সেটা হিসেব করে ফেলেন।
স্টেপ ৩ঃ ফাইনাল খেলা
এখন আসল মজার স্টেপ। আপনার টোটাল ইনকামকে টোটাল বছরে কত ঘন্টা কাজের পেছনে ব্যয় করেন সেটা দিয়ে ভাগ করতে হবে। মানে ব্যাপারটা হবে এমনঃ
১ ঘন্টা সময়ের দাম = (টোটাল বছরে ইনকাম) / ( টোটাল বছরে কাজের পেছনে যত ঘন্টা ব্যয় হয় )
উপরের উদাহারণ অনুযায়ী, বছরে আপনি ২৫০০ ঘন্টা কাজের পেছনে ব্যয় করেন এবং বছরে টোটাল আয় করেন ১৫ লাখ টাকা।
সুতরাং, আপনার ১ ঘন্টা সময়ের দাম = ১৫ লাখ টাকা/২৫০০ ঘন্টা = ৬০০ টাকা প্রতি ঘন্টা।
এভাবে খুব সহজে আপনার ১ ঘন্টা সময়ের দাম বের করতে পারবেন!
আপনার ১ ঘন্টা সময়ের দাম কত? কমেন্ট করে জানাতে পারেন!